বিগকমার্স বনাম শপিফাইঃ অনলাইন স্টোরের জন্য কোনটা বেষ্ট
Bengali (বাংলা) translation by Arnab Wahid (you can also view the original English article)
ইকমার্স স্টোর বানানোর সময়, একটা প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করা অনেক জরুরী ধাপ। ব্যাবসা বাড়ার সাথে সাথে যেন সেটা অ্যাডজাস্ট করে নেয়া যায়।
একটা এমন প্ল্যাটফর্ম, যেটায় স্টোর ম্যানেজ করার জন্য দরকারি সকল টুলস ও ফিচার আছে, ইকমার্সের জন্য অতিব জরুরী।
ইকমার্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে বিগকমার্স ও শপিফাই।
শপিফাই এস্টাবলিশ হয়েছিল ২০৪ সালে, আর এর কয়েক বছর পরে ২০০৯ এ আসে বিগকমার্স।
দুটা প্ল্যাটফর্মই স্টোর ওউনারদের জন্য সুবিধাজনক ফিচার দিয়ে থাকে।



এই আর্টিকেলে আমরা এই দুইটা প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা তুলনা করে দেখব।
সংক্ষিপ্ত রিভিউঃ বিগকমার্স বনাম শপিফাই
কোনটা ব্যবহার করবেন? বিগকমার্স নাকি শপিফাই?
দুইটাই হোস্টেড প্ল্যাটফর্ম। এর মানে হচ্ছে আপনার নিজের হোস্টিং এর জন্য টাকা খরচ হবে না।
দুই প্ল্যাটফর্মই অ্যাডমিন প্যানেল অ্যাকসেস দেয়, দুটাতেই ইন্টারফেস ও লুক কাস্টমাইজ করা যায়।
অ্যাডমিন প্যানেল হতে সেলস, শিপিং ও কাস্টমার কেয়ার কন্ট্রোল করা যায়।
আসুন দুটা সার্ভিস একটু বিস্তারিত ঘেঁটে দেখি।
১। বিগকমার্সঃ বিষদ আলোচনা
বিগকমার্স একটা হোস্টেড সার্ভিস। এটা রিসেন্টলি রিব্র্যান্ড করা হয়েছে এবং এতে অনেক নতুন ফিচার অ্যাড করা হয়েছে।



এটা একমাত্র অনলাইন স্টোর সার্ভিস যেটা গুগল মার্চেন্ট সেন্টার ইন্টিগ্রেশন বাই ডিফল্ট সাপোর্ট করে। এতে করে মানুষ এই প্রোডাক্ট গুগল শপিং থেকে কিনতে পারে।
বিগকমার্সের মুখ্য ফিচার গুলো হচ্ছেঃ
- ফ্রি ও পেইড রেসপনসিভ থিম।
- নিরাপদ শপিং কার্ট
- পেপাল, এপল পে ও অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়ে ইন্টিগ্রেশন
- অনেক রকমের মার্কেটিং টুলস, ফেসবুক, ইবে, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি সাপোর্ট
- ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট
- মাল্টি কারেন্সি সাপোর্ট
- ড্রপ শিপিং ও ওয়্যারহাউস ইন্টিগ্রেশন



এই প্ল্যাটফর্মে অনেক ব্যবসা পরিবর্ধন সহায়ক ফিচার রয়েছে বলে এর নির্মাতারা দাবি করেন।
আসুন এর কিছু কোর ফিচার দেখে নেইঃ
বিগকমার্স থিম ও ডিজাইন অপশন
থিম স্টোরে বর্তমানে ৯১ টি থিম রয়েছে, কিছু ফ্রি ও কিছু পেইড। পেইড থিমের মূল্য ১৪৫ থে ২৩৫ ডলারের মধ্যে।



এছাড়াও অনেক থার্ড পার্টি বিগকমার্স থিম কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলোতে অনেক স্টোর স্পেসিফিক ফিচার থাকে।
আমাদের সকল থিম মোবাইল রেসপনসিভ ও পার্ফর্মেন্সের জন্য অপটিমাইজ করা।
এই থিম আপনি আপনার স্টোরের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
- বিগকমার্সকিভাবে আপনার বিগকমার্স স্টোরে থিম ব্যবহার করবেনব্রেন্ডা ব্যারন
- বিগকমার্স১৫+ ইকমার্স সাইটের জন্য বিগকমার্স ডিজাইন টিপব্রেন্ডা ব্যারন
SEO টুল
বিগকমার্সে কিছু SEO টুল রয়েছে যেটা দিয়ে স্টোর সাইটের ভিজিবিলিট বাড়ানো সম্ভব। ফলে সেলসও বৃদ্ধি করা সম্ভব। এটার সুবিধা আপনি ব্যবহার করতে পারেন সহজেই।
বিগকমার্স প্ল্যাটফর্ম নিজেদের কাস্টম CDN ব্যবহার করে, ফলে সাইটের আপটাইম অনেক ইম্প্রুভ হয়।
পেমেন্ট ইন্টিগ্রেশন
বিগকমার্স পেপাল ও স্ট্রাইপ সহ প্রায় ৬০টি পেমেন্ট গেটওয়ে সাপোর্ট করে। এটা অফলাইন পেমেন্টও রিসিভ করতে পারেন।
কেন বিগকমার্স ব্যবহার করবেন
বিগকমার্স বিজনেস এক্সপ্যানশনে সহায়তা করে। ব্যবসা পরিবর্ধনে এই প্ল্যাটফর্ম সহায়ক।
এর সাহায্যে অনেক রকম ক্যাম্পেইন ও প্রমোশন করা যায়। যাতে সেলস বাড়ে।
সকল বিগকমার্স ব্যবহারকারী ফ্রি গুগল অ্যাডওয়ার্ড ক্রেডিট পেয়ে থাকেন, যেটা দিয়ে ফ্রি স্টোরের মার্কেটিং করতে পারবেন।
এই প্ল্যাটফর্মে সহজেই ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট করা যায়।
সব শেষে, বিগকমার্স অনেক সফটওয়্যার ও অ্যাপ ইন্টিগ্রেশন সাপোর্ট করে, যেটা দিয়ে সেলস বৃদ্ধি করা সহজ হয়ে যায়।
কাস্টমার সার্ভিস ও সাপোর্ট
বিগকমার্স সার্ভিস ও সাপোর্টের জন্য অনেক টুলস ও ফিচার দিয়ে থাকে। যে সব অ্যাডমিন প্যানেল থেকে কন্ট্রোল করা যায়। লাইভ চ্যাট ও টিকেটিং সিস্টেম কাজ অনেক সহজ করে তোলে।
প্রাইস প্ল্যান
বিগকমার্সে বর্তমানে ৪টি প্রাইস প্ল্যান রয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড প্ল্যান মাসিক ২৯.৯৫ ডলার। ফিচার রয়েছেঃ
- আনলিমিটেড প্রোডাক্ট
- আনলিমিটেড স্টোরেজ ও ব্যান্ডউইথ
- মাল্টিপল সেলস চ্যানেল
- ক্রেডিট কার্ড সাপোর্ট
- ফ্রি ট্রান্সাকশন
- ২৪ ঘন্টা লাইভ এজেন্ট সাপোর্ট
বিগকমার্স এর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যাদের সেলস এর আয় ৫০,০০০ হাজার ডলারের বেশি, তাদের জন্য এই প্ল্যান বেষ্ট।
প্লাস প্ল্যান মাসিক ৭৯.৯৫ ডলার। এটা যাদের মুনাদা বাৎসরিক ১৫০০০০ ডলারের বেশি, তাদের জন্য।
- রিয়েল টাইম ক্যারিয়ার শিপিং
- পরিত্যাক্ত কার্ট সেভার
- অ্যাডভান্সড কাস্টমার সেগমেন্টেশন
প্রো প্ল্যানে প্লাস প্ল্যানের সব ফিচার রয়েছে। এটা যাদের আয় ৪০০০০০ ডলারের বেশি, তাদের জন্য। এটায় গুগল রিভিউ এনেবল করা যায়। ও ফিল্টার সার্চ ফিচার অ্যাড করা যায়।
আর সর্বশেষ, এন্টারপ্রাইজ প্ল্যান বড় হাই ভলিউম ব্র্যান্ডের জন্য, এটা ফোন কলের মাধ্যমে কাস্টম প্রাইসিং ফিচার সাপোর্ট করে। আর এই প্ল্যানে প্রায়োরিটি সাপোর্ট দেয়া হয়।
আসুন এবার বিগকমার্সের সাথে শপিফাই তুলনা করে দেখিঃ
২। শপিফাই - বিস্তারিত আলোচনা
বিগকমার্সের মত শপিফাইও একটি হোস্টেড প্ল্যাটফর্ম যেটা দিয়ে অনলাইন স্টোর পাওয়ার করা হয়।



শপিফাই এর একটা সুবিধা হচ্ছে 'শপিফাই বাটন' উইজেট, পেপাল বাটনের মত যেটা আপনার এখনকার স্টোরে শপিফাই এমবেড করতে সাহায্য করে।
শপিফাই এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হচ্ছেঃ
- শপিফাই এ ব্যবহার করার জন্য অনেক রকম প্রফেশনাল থিম রয়েছে।
- ৭০টারও বেশি পেমেন্ট গেটওয়ে
- SEO এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টিগ্রেশন
- ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট
- স্টোর ম্যানেজার মোবাইল অ্যাপ



শপিফাই থিম ও ডিজাইন অপশন
শপিফাই এর জন্য ফ্রি এবং পেইড থিম ব্যবহার করা যায়। পেইডগুলোর মূল্য ১০০ থেকে ১৮০ ডলারের মত।



থিমফরেস্টে অনেকে রকমের পেইড শপিফাই স্টোর থিম কিনতে পাওয়া যায়।
এখান থেকে আপনার স্টোরের জন্য একটি থিম বেছে নিন।
SEO টুল
শপিফাই বেষ্ট SEO প্র্যাকটিস ফলো করে। যেটা আপনার স্টোরের ভিজিবিলিটি বাড়িয়ে তোলে।
শপিফাই এর ডেডিকেটেড সার্ভার পেজ লোডিং টাইম ইমপ্রুভ করে। আর শপিফাই ফ্রি SSL সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে।
পেমেন্ট ইন্টিগ্রেশন
আগে যেমন বলেছি, শপিফাই ৭০টিরও বেশি পেমেন্ট গেটওয়ে সাপোর্ট করে। এই জন্য সকল রকমের পেমেন্ট মেথড ইন্টিগ্রেশন সহজেই করা যায়।
কেন শপিফাই ব্যবহার করবেন
শপিফাই সহজেই সেটাপ করা যায়, এই জন্য অনেকেই অন্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় শপিফাই বেশি পছন্দ করে থাকেন।
শপিফাই ব্যবহার করে আপনি কাস্টমারদের ডিসকাউন্ট, কুপন কোড ও মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করতে পারেন।
শপিফাই থার্ড পার্টি অ্যাপ ইন্টিগ্রেশন যেমন, জেনডেস্ক, ইনভয়েস জেনারেটরের ও প্রফিট মার্জিন ক্যালকুলেটর ইত্যাদি সাপোর্ট করে।
কাস্টমার সাপোর্ট
শপিফাই ব্যবহারের জন্য ডিটেইলড ডকুমেন্টেশন ও অ্যাক্টিভ সাপোর্ট কমিউনিটি রয়েছে যারা ২৪ ঘন্টা সাপোর্ট দিয়ে থাকে।
খরচ
শপিফাই এর ৩টি প্রাইসিং প্ল্যান রয়েছে
সবচেয়ে কমদামী না মাসে ২৯ ডলার। এতে যা যা ফিচার আছেঃ
- আনলিমিটেড প্রোডাক্ট
- ২ জন স্টাফ মেম্বার
- শিপিং লেবেল প্রিন্টিং
- ফ্রড অ্যানালাইসিস
- ম্যানুয়েল অর্ডার তৈরি
- ডিসকাউন্ট কোড
- SSL সার্টিফিকেট
পরের প্রাইসিং প্ল্যান মাসিক ৭৯ ডলার। এতে প্রফেশনাল রিপোর্ট, ৫ জন টিম মেম্বার ও পরিত্যাক্ত কার্ট রিকভারির সুবিধা রয়েছে।
সবচেয়ে দামী প্রাইসিং প্ল্যান হচ্ছে মাসে ২৯৯ ডলার। এটায় থার্ড পার্টি শপিং রেট ও অ্যাডভান্স রিপোর্টিং ফিচার রয়েছে।
কোনটা ব্যবহার করবেন? (বিগকমার্স বনাম শপিফাই)
বিগকমার্স ও শপিফাই দুটাই শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। কেউ অনলাইন স্টোর ওপেন করতে চাইলে দুটাই যাচাই করে দেখা উচিৎ। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অসুবিধা গুলাও দেখে নেয়া উচিৎ।
১। বিগকমার্সের সুবিধা অসুবিধা
এতে অনেক ফিচার আছে। সুবিধা অসুবিধাগুলো হলঃ
সুবিধা
- পাওয়ারফুল মার্কেটিং ফিচার
- POS ইন্টিগ্রেশন
- কোন ট্রান্সাকশন ফি নেই
- সিঙ্গেল পেজ চেকআউট
- মোবাইল রেসপনসিভ থিম
- কমপ্রিহেনসিভ সাপোর্ট
- সাশ্রয়ী ক্রেডিট কার্ড প্রসেসিং চার্জ
অসুবিধা
- অল্পকিছু থিম নির্বাচনের অপশন
- সীমিত সংখ্যক থার্ড পার্ট অ্যাপ ইন্টিগ্রেশন
- কোন মোবাইল অ্যাপ নেই
২ শপিফাই এর সুবিধা অসুবিধা
শপিফাই এর সুবিধা অসুবিধাগুলো হলঃ
সুবিধা
- অনেক বড় থিম সিলেকশন
- অনেক থার্ড পার্টি অ্যাপ সাপোর্ট
- POS ইন্টিগ্রেশন
- বেশি পেমেন্ট পেটওয়ে সাপোর্ট
- বেটার প্রোডাক্ট ক্যাটাগরাইজেশন
অসুবিধা
- সবচেয়ে দামী প্ল্যান বিগকমার্সের চেয়ে বেশি মূল্যের
- থার্ড পার্টি মার্কেটপ্লেস নেই
- কার্ট রিকভারিতে আওয়ারলি লিমিট আছে
- সীমিত প্রোডাক্ট ভ্যারিয়েশন
- এক্সটার্নাল পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করলে ০.৫% থেকে ২.০% পর্যন্ত চার্জ দিতে হয়
বিগকমার্স না শপিফাই?
সকল দিক বিবেচনা করে শপিফাই ও বিগকমার্স দুটাই ভালো প্ল্যাটফর্ম। একদিকে শপিফাই বেশি জনপ্রিয়, অন্য দিকে বিগকমার্স কম দামে শপিফাই এর চেয়ে বেশি ফিচার দিয়ে থাকে। বিগকমার্সের কম মূল্যের প্ল্যানে শপিফাই এর চেয়ে বেশি ভালো রিপোর্টিং ফিচার দেয়া আছে, প্লাস, কোন ট্রানসাকশন ফি নেই।
শপিফাই তে বেশি থিমের কালকশন রয়েছে ও নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করে নিতে সহায়তা বেশি।
বিগকমার্স বা শপিফাই দিয়ে অনলাইন স্টোর তৈরি করা
আপনার ফাইনাল চয়েস আপনার স্টোরের চাহিদার উপর নির্ভর করে। বিগকমার্স পছন্দ করলে আমাদের বিগকমার্স থিম সিলেকশন দেখতে পারেন।
আর শপিফাই নির্বাচন করলে, আমাদের শপিফাই থিমের কালেকশন দেখতে পারেন।


